Search This Blog
ফাহিম ইসলামিক ব্লগ: এখানে ইসলামিক জ্ঞান, ওয়াজ, গজল, কোরআন হাদীস ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে দ্বীনি জ্ঞান শেয়ার করা হয়।
Featured
- Get link
- X
- Other Apps
কোরবানী: ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ গাইড (কুরআন-হাদীসের আলোকে)
১. ভূমিকা
কোরবানী ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি ঈদুল আযহা উপলক্ষে আদায় করা হয়, যা হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর ত্যাগের স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এই ইবাদতের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের প্রিয় সম্পদকে ত্যাগ করে।
🔹 কোরআনে বলা হয়েছে:
“আপনি আপনার প্রতিপালকের জন্য সালাত কায়েম করুন ও কোরবানি করুন।”
— (সূরা কাওসার: ২)
২. কার জন্য কোরবানী দেওয়া জায়েয?
কোরবানী মূলত মুকীম (স্থানীয়), সাবালেগ (বালেগ), আকিল-বালেগ (বুদ্ধিমান) এবং নিষ্কণ্টকভাবে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক এমন প্রতিটি মুসলিমের ওপর ওয়াজিব, পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই।
🔹 হাদীস:
“নবী (সা.) মিনা-তে ছিলেন, তখন তিনি বললেন, এই দিনগুলিতে আমাদের প্রথম কাজ হল নামাজ আদায় করা, তারপর কোরবানী করা। যারা তা করে, তারা আমাদের সুন্নাহ অনুযায়ী কোরবানী করল।”
— (বুখারী: ৫৫৪৫)
৩. কে কে কোরবানী দিতে পারবে?
যে ব্যক্তি —
-
মুসলিম
-
প্রাপ্তবয়স্ক (বালেগ)
-
নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক (যাকাতের মতো)
-
মুকীম (মুসাফির নয়)
তারা কোরবানী দিতে পারবে এবং তাদের ওপর এটি ওয়াজিব।
🟢 নেসাব পরিমাণ সম্পদ মানে হলো:
৫২.৫ তোলা রূপা বা ৭.৫ তোলা সোনা বা তার সমপরিমাণ নগদ অর্থ, মাল বা ব্যবসায়িক সম্পদ।
৪. কোরবানীর পশু কেমন হওয়া উচিত বা কেমন হলে ভালো হবে?
✅ কোরবানির পশু হতে হবে —
-
নির্দিষ্ট বয়সের (ছাগল/ভেড়া ১ বছর, গরু/মহিষ ২ বছর, উট ৫ বছর)
-
শারীরিকভাবে সুস্থ
-
চোখ, কান, পা, লেজ অক্ষত
-
কোনো গুরুতর ত্রুটি বা রোগ থাকা চলবে না
❌ যে পশু কোরবানির অযোগ্য:
-
এক চোখ অন্ধ
-
পা ভাঙা বা খোঁড়া
-
মারাত্মক রোগে আক্রান্ত
-
খুব দুর্বল বা হাড় ছাড়া
🔹 হাদীস:
“চার ধরনের পশু কোরবানি করা জায়েয নয়: (১) এক চোখ পুরোপুরি অন্ধ, (২) মারাত্মক অসুস্থ, (৩) খোঁড়া যে হেটে যেতে পারে না, (৪) খুব দুর্বল যার মাংস নেই।”
— (তিরমিজি: ১৪৯৭)
৫. নামাজের আগে না পরে পশু জবাই করতে হবে?
✅ ঈদুল আযহার নামাজের পরে কোরবানি করতে হবে।
🔹 হাদীস:
“যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করে, সে কেবল মাংস খাওয়ার জন্য জবাই করল; আর যে নামাজের পরে কোরবানি করে, তার কোরবানি পূর্ণ হলো।”
— (বুখারী: ৫৫৪৫)
৬. যদি কোরবানির পশুর দুধ পাওয়া যায়, খাওয়া যাবে কি না?
✅ কোরবানির পশুর দুধ খাওয়া জায়েয — যদি দুধ দোহানো হয় এবং পরে তার মূল্য সদকা করা হয়।
🔹 ফিকহী মতামত অনুযায়ী:
যদি কেউ কোরবানির পশুকে ঈদের আগে দুধ দোয়ায়, তবে সেই দুধ সে খেতে পারবে, কিন্তু তার সমপরিমাণ দান করে দেওয়া উত্তম।
৭. অতিরিক্ত কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর
➤ একটি গরু কয়জনের কোরবানি দেওয়া যায়?
👉 গরু বা উট: সর্বোচ্চ ৭ জন। তবে সকলের নিয়ত আল্লাহর জন্য হতে হবে।
➤ কোরবানির সময়কাল কতদিন?
👉 ঈদের দিন (১০ জিলহজ) থেকে শুরু করে ১১ ও ১২ জিলহজ — মোট তিন দিন।
➤ মেয়েরা কি কোরবানি করতে পারে?
👉 অবশ্যই, যদি তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়।
🔚 উপসংহার
কোরবানী কেবল মাংস খাওয়ার নাম নয়, বরং তা ত্যাগ ও ইখলাসের একটি পরীক্ষা। আল্লাহ বলেন:
“তাদের মাংস ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।”
— (সূরা হজ: ৩৭)
আসুন, আমরা সবাই নিয়ত ঠিক করে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সঠিকভাবে কোরবানি করি।
টি হাদিস জানি।
🕋 কোরবানী নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি হাদীস (সহীহ সূত্রসহ)
১. কোরবানী আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় আমল
“আদম সন্তানের কোন কাজ আল্লাহর নিকট কোরবানির দিনের কোরবানী থেকে বেশি প্রিয় নয়।”
— (তিরমিজি: ১৪৯৩)
২. কোরবানির রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই কবুল হয়
“নিশ্চয়ই কোরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। কাজেই খুশি মনে কোরবানী দাও।”
— (তিরমিজি: ১৪৯৪)
৩. প্রত্যেক পশুর প্রতিটি অঙ্গের জন্য সওয়াব
“কোরবানীর প্রতিটি পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে তোমার জন্য এক একটি সওয়াব রয়েছে।”
— (ইবনে মাজাহ: ৩১২৭)
৪. ঈদের দিন সর্বোত্তম আমল কোরবানী
“সন্তান আদমের কোন আমল নেই, যা ঈদের দিন আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে অধিক প্রিয়। কিয়ামতের দিন তা শিং, চুল ও খুরসহ নিয়ে আসা হবে।”
— (তিরমিজি: ১৪৯৩)
৫. নামাজের আগে কোরবানী গ্রহণযোগ্য নয়
“যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে কোরবানী করে, সে কেবল গোশতের জন্য কোরবানী করলো, তা ইবাদত হলো না।”
— (বুখারী: ৫৫৪৫)
৬. খাঁটি নিয়তের গুরুত্ব
“যারা কোরবানী করে, তারা যেন কেবল আল্লাহর জন্যই করে; কারণ আল্লাহ তাকওয়া গ্রহণ করেন।”
— (সূরা হজ: ৩৭ — আয়াত নয়, কনটেক্সট হাদীসের সঙ্গে মিলিয়ে বলা হয়েছে)
৭. শরিক হয়ে কোরবানী করা
“একটি গরুতে সাতজন এবং একটি উটে সাতজন শরিক হতে পারে।”
— (সহীহ মুসলিম: ১৩১৮)
৮. নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য কোরবানী
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে কোরবানী করতেন।”
— (মুসলিম: ১৯৬৭)
৯. কোরবানীর পশুর বৈশিষ্ট্য
“চার ধরনের পশু কোরবানী করা জায়েয নয়: এক চোখ অন্ধ, মারাত্মক অসুস্থ, খোঁড়া যা হাটতে পারে না, এবং এমন দুর্বল যার মধ্যে মাংস নেই।”
— (তিরমিজি: ১৪৯৭)
১০. তাকওয়াই আসল
“আল্লাহর কাছে পশুর মাংস ও রক্ত পৌঁছায় না, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।”
— (সূরা হজ: ৩৭)
🔚 উপসংহার:
এই হাদীসগুলো প্রমাণ করে যে কোরবানী শুধু একটি বাহ্যিক আমল নয়, বরং এটি ইখলাস, তাকওয়া ও ত্যাগের চূড়ান্ত রূপ।
আমরা সবাই নিয়ত ঠিক করে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সঠিকভাবে কোরবানি করি।
📌 আপনার মতামত দিন
এই পোস্টটি আপনার উপকারে এলে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আপনি চাইলে এই ব্লগটি অন্যদের সাথেও শেয়ার করতে পারেন।
Popular Posts
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment